আগরতলা মামলা (রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য-১৯৬৮)

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - পৌরনীতি ও নাগরিকতা - জাতীয় চেতনা ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় | NCTB BOOK

৬ দফার সংগ্রামকে ব্যর্থ করে দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে আইয়ুব সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এক নম্বর আসামী করে ৩৫ জন বাঙালি সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক একটি মামলা দায়ের করে, যা ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা নামে পরিচিত। এর আনুষ্ঠানিক নাম ছিল 'রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য'। এই মামলায় বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামি করা হয়। কিন্তু আগরতলা মামলাকে কেন্দ্র করে বাঙালিদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা আরো জোরদার হয়।

বঙ্গবন্ধুসহ ৬ দফাপন্থী অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ জেলে বন্দী থাকায় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের নেতৃত্বভার সচেতন ছাত্রসমাজের উপর গিয়ে বর্তায়। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন ও মতিয়া উভয় গ্রুপ), সরকারি ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের দোলন গ্রুপ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ঐক্যবদ্ধ হয়ে আইয়ুববিরোধী মঞ্চ, কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। ডাকসুর তৎকালীন সহ-সভাপতি অনলবর্ষী ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমদ এর সভাপতি নির্বাচিত হন । বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬ দফা কর্মসূচির প্রতি সর্বাত্মক সমর্থনসহ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাদের ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে । ফলে যে উদ্দেশ্যে আইয়ুব খান আগরতলা মামলা দায়ের করেছিল তা সফল হয়নি। বরং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত করে ১১ দফা ভিত্তিক একটি কর্মসূচি গ্রহণ করে । এই কর্মসূচি পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের জাতীয় মুক্তির বা স্বাধীনতার লক্ষ্যকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আগরতলা মামলা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধুসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন শুরু করে। বস্তুত ১৯৬৮ সালের নভেম্বর মাস থেকে ১৯৬৯ সালের মার্চ পর্যন্ত পাঁচ মাস সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে গণবিদ্রোহ দেখা দেয় । একই সময় পশ্চিম পাকিস্তানেও আইয়ুব-বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠে ।

৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে পূর্ব বাংলার সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে একটি সুদৃঢ় নাগরিক ঐক্য গড়ে উঠার ভিত্তি তৈরি হয় । আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করে । সংঘটিত হয় ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান । গণ-অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৬৯ সালের ২৫শে মার্চ জেনারেল আইয়ুব খান ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হন। আগরতলা মামলাবিরোধী গণ-অভ্যুত্থান স্বাধীন বাংলাদেশের উদ্ভবে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে ।

Content added || updated By
Promotion